নূর চৌধুরী।।
আজকের এই মহতি আয়োজনের সঞ্চালক হলেন দেশ বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ডঃ শাহাদাত হোসেন নিপু । তার ভরাট কন্ঠ এবং মাধুর্য্যময় বলিষ্ঠ স্পষ্ট উচ্চারণ ছড়িয়ে পড়লো হলঘরে।
মঞ্চে উপবিষ্ট হলেন সম্মানিত সভাপতি প্রশিকার চেয়ারম্যান লেখিকা রোকেয়া ইসলাম। প্রধান অতিথির আসনকে অলংকৃত করলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দস বিশেষ অতিথী প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম কবি আসলাম সানী কবি ও সাংবাদিক নাসির আহমেদ কবি ও সাংবাদিক ফারুক মাহমুদ প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের উপ প্রধান নির্বাহী কামরুল হাসান কামাল উপপ্রধান নির্বাহী আবদুল হাকিম সি এফ ও শক্তিপদ চক্রবতী এবংডঃ দেবব্রত দেবরয় ৷৷ স্বাগত ভাষনে নির্বাহী প্রধান সিরাজুল ইসলাম আগরতলা থেকে আগত অতিথিদের এবং বাংলাদেশের গুণীজন ও প্রশিকা পরিবারের সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবার জন্য।
দেশের আর্থসামাজিক মানবিকতা উন্নয়ন আর সুন্দর দেশ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশিকা অনন্য ভুমিকা পালন করে আসছে। আজ দেশের ৪১ টি জেলায় প্রশিকার মানবিক উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত আছে। আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশিকা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সাহিত্য সংস্কৃতি আনন্দ বিনোদন ব্যক্তি সমাজ তথা দেশ উন্নয়নে বিকল্প নেই।
তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত অথচ খুবই মূল্যবান। উপ প্রধান নির্বাহী কামরুল হাসান কামাল বাংলাদেশ ভারত সম্প্রীতি উৎসবের প্রেক্ষাপট অল্পকথায় বলেন, চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম কিছুদিন আগে আগরতলা ভ্রমণে গিয়েছিলেন, সেখানে কবি ও কথাসাহিত্যিক রোকেয়া ইসলাম ও তার সফর সঙ্গীদের সংবর্ধনা দেন ভারত বাংলা মৈত্রী সংসদ,
চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম তখনই তাদের আমন্ত্রণের মাধ্যমে আজকের এই উৎসবের সূত্রপাত করেন। প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র বরাবরই এমন আয়োজনে সিদ্ধহস্ত। অতীত হয়েছে ভবিষ্যতে হবে।
এরপর বক্তব্যে এলেন ভারতীয় অতিথি আমাদের আজকের অতিথি প্রধান ড. দেবব্রত দেবরায় উনার পুরো বক্তৃতা জুড়ে ছিল স্বাধীনতা চলাকালীন সময়ের কথা। এদেশের মুক্তি যুদ্ধের কথা বংগবন্ধুর ৫৪ বছর জীবনকালে ৩২ বার কারাবরণেএ কথা। কারাগারের কথা কঠিন দৃঢতা আর সংকল্পতার কতা। মুক্তিবাহিনীর কথা। তার দেশের আন্তরিকতার কথা ঈন্দিরা গান্ধীর কথা।
অসাধারণ তার কথাগুলো আমাদের দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি এতো টান এতো মমত্তবোধ হতবাক করে তুলে।
তিনি ত্রিপুরাতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকীতে বেশ কিছু আয়োজন করেছেন, শুনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম মনে মনে।
এলেন দেশ বরেণ্য ছড়াকার আসলাম সানী তার অগ্নিঝরা বক্তব্য বঙ্গবন্ধু ভারত বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরলেন। চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলামের স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা এটুকু জানতাম তিনি যে আজীবন মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তার ছিঁটেফোঁটা জানলেও আজ আসলাম সানীর কথায় তার মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সংগ্রামের কথা জানলাম, অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি নিরবে নিভৃতে আজও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে যান, তার স্ত্রী রোকেয়া ইসলাম প্রগতিশীল আন্দোলনে কিভাবে অংশ নিয়েছেন তাও বললেন।
আজ এখানে না এলে অজানাই থেকে যেত এই মূল্যবান তথ্যগুলো।
এরপর অতিথি বক্তাতায় বিশিষ্ট কলামিস্ট লেখক কবি সাংবাদিক নাসির আহম্মেদ । তার বক্তৃতাজুড়ে ছিল প্রশিকার সামাজিক উন্নয়নের কথা। মানবিক মূল্যবোধে প্রশিকার অগ্রগণ্য ভুমিকার কথা দেশ উন্নয়ণে প্রশিকার অংশ গ্রহণের কথা। পরিশেষে তার বক্তৃতায় উঠে এলো দাবী প্রথম দাবী: সেতুবন্ধনের সম্প্রীতির মেলা তা যেন বছর বছর প্রশিকা ধারণ পালন করে। দ্বিতীয়ত: একটা মাসিক বা ত্রৈমাসিক পত্রিকার মাধ্যমে তাদের মানবিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করে। এরপর এলেন সদ্য বাংলা একাডেমি পদকে ভূষিত কবি ও সাংবাদিক ফারুক মাহমুদ।
তার অনেক কথার মাঝে তিনি প্রতিশ্রুতি চান আজ প্রশিকা পরিবারের কাছে প্রতিবছর যেন দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য উৎসব এখানে অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
তার কথার পরপরই পদক প্রদান করা হয়।
এবার ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংসদের পদক প্রাপ্তরা হলেন
কবিতায়
২কবি মাহমুদ কামাল
২ কথাসাহিত্যে দিলারা মেসবাহ
৩ বিশিষ্ট উন্নয়ন কর্মী সিরাজুল ইসলাম
৪ বিশিষ্ট উন্নয়ন কর্মী আবদুল হাকিম
৫ বিশিষ্ট উন্নয়ন কর্মী কামরুল হাসান কামাল
তাদের ক্রেষ্ট প্রদান ও উত্তরীয় পরিয়ে সন্মানিত করেন ডঃ দেবব্রত দেবরয়।
এতোক্ষণ যার কথা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে পুরো হলঘরের দর্শক শ্রোতা এবার তার পালা।
মাইক্রোফোনে সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুস।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম তার জ্ঞানগর্ভ কথা। কি যাদু তার কথায়! কি মন্ত্র তার কথায়! পিনপতন নীরবতায় তিনি বলছেন ইতিহাস ঐতিহ্য সংগ্রাম স্বাধীনতা আন্দোলন। প্রশিকার সাথে তার সম্পর্ক।
এবার মাইক্রোফোনে চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম।
তিনি তার স্বপ্নকে চোখ মেলে দেখলেন হলঘর জুড়ে, আগরতলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি যে সম্প্রীতি উৎসবের ভ্রুন তৈরি করেছিলেন আজ তার সফল জন্ম হলো,
তিনি নিজেকে পরিচয় দিলেন এভাবে” আমি সেই শহরের মেয়ে যে শহরে উপমহাদেশের সেরা সাহিত্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়”.
দর্শক সারিতে বসে আছেন আজকের পদক প্রাপ্ত কবি মাহমুদ কামাল। তিনিই এই উৎসবের কর্ণধার। তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রোকেয়া ইসলাম কথা
বলছেন ইতিহাস ছুঁয়ে স্বাধীনতার কথা। প্রশিকার সংগ্রাম সাফল্যগাঁথা এগিয়ে চলা আকাশ স্পর্শ স্বপ্নের কথা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক প্রশিকা যা পরিচালিত হয় সাম্যতা ন্যয্যতার মমতার ভিত্তিতে।
এবার এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এতোক্ষণ তার অগ্রজ বন্ধুজনেরা যে দাবি তার কাছে করেছেন তার পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দেবার পালা।
তিনি বললেন প্রশিকা নিয়মিত দুটো পত্রিকা প্রকাশ করে একটা দৃঢ় পায়ে এগিয়ে আলা নারী অন্যটা অঙ্গীকার।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছরকে স্মরণীয় রাখতে প্রকাশিত হয়েছে “মুক্তির পঞ্চাশ গল্পে দুই প্রজন্ম ” নারীর ক্ষমতায়নকে গতিময় করতে ” নারীর বিশ্ব ” নামের দুটো গ্রন্থ।
হ্যা তিনি প্রশিকার প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম ও কবি নাসির আহমেদকে পাশে নিয়ে ঘোষণা দিলেন “হবে “।
তারপর দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য উৎসব হ্যা এটাও হবে।
সারা হলঘর জুড়ে আনন্দের স্রোতধারা প্রবাহিত হচ্ছে,।
(চলবে)
Leave a Reply